[জন্ম: ৯ নভেম্বর ১৯২১, শহিদ: ২০ জুলাই ১৯৭১]
১৯৭১। এ-সময়ের প্রতীক্ষায় কেটেছে বাঙালির হাজার বছর। হাজার বছরে রক্ত ঝরেছে স্বাধীনতাকামী আমাদের বহু স্বজনের, বহুবার। বিশাল কালপরিসরে রক্তস্রোতের চেতনাধারা প্লাবিত করেছে কাদামাটির মতোন নরম বাঙালি-হৃদয়। পরাধীনতার অর্গল পেরিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নবিভোর এ-জনমানুষেরই একজন ছিলেন ডা. আব্দুন নূর। দেশপ্রেমিক এ-মানুষটি আমাদের স্বাধীনতার বেদিমূলে একজন শহীদ। তাঁর আত্মদানের কাহিনী মোস্তফা সেলিম রচিত মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে এভাবে-
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২০ জুলাই এখানে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ৩ নম্বর নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ডা. আব্দুন নূরকে। এলাকায় তিনি ‘নুনু ডাক্তার’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং সক্রিয় সমাজকর্মী এই মানুষটি গ্রামে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করে সহযোগিতা করতেন তাঁদের। রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণেই রাজাকারেরা সন্দেহপ্রবণ ছিল ডা. নূরের ওপর। নজরদারি করে তাঁর গতিবিধি অনুসরণ করত। এটা জেনেও ডা. নূর কর্তব্যে পিছু হটেননি। সারাক্ষণ রাজাকারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সাহায্য করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তাঁদের নিকট লেখা তাঁর একটি চিঠি ফাঁস হয়ে যায় জুলাই মাসের মধ্যভাগে। রাজাকার মারফত খবরটি পৌঁছে যায় হানাদার বাহিনীর কাছে। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে যায় শাহবাজপুর পাক-ক্যাম্পে। শুরু হয় নির্যাতন। তারপরও কোনও তথ্য ফাঁস করতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানি সেনারা। মৃত্যুর সামনেও তিনি ছিলেন অবিচল। এই স্থানে কোমর-সমান উচ্চতার গর্তে তাঁকে নামায় পাকিস্থানি সৈন্যরা। তারপর গুলি চালিয়ে বিদীর্ণ করা হয় তাঁর বুক। গর্তে লুটিয়ে পড়ে নিথর দেহ, দেশপ্রেমিক ডা. আব্দুন নূরের মরদেহ এই গর্তেই মাটিচাপা দেয় হানাদার-সেনারা।
এ বীর শহিদসহ ত্রিশলক্ষ বীর শহিদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান শহিদ ডা. আব্দুন নূর ফাউন্ডেশন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয় ৯ অক্টোবর। এই উপলক্ষে হাজী ইউনুছ মিয়া মেমোরিয়েল উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোস্তফা সেলিম। বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল হামিদ সেলিম, ট্রাস্টি সদস্য মোঃ এনাম উদ্দীন, ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক প্রবাসী কমিউনিটি লিডার আলহাজ্ব আবুল হোসেন গিয়াস এবং ফখরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ট্রাস্টি সদস্য আখতারুজ্জামান ছাদেক। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের ইদ উপহার প্রদান করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে পরগণাহী দৌলতপুর আলিয়া মাদ্রাসাকে একটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় এক মসজিদের মোয়াজ্জিনের চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ সাহায্য (দশ হাজার টাকা) প্রদান করা হয়।
শহিদ ডা. আব্দুন নূর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে শহিদ ডা. আব্দুন নূর স্মৃতি হাসপাতাল। আজ বিকেল ৫টায় সংগঠনের সদস্যবর্গ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে হাসপাতালের নির্ধারিত স্থানে ফলক বসানো হয়।
সংগঠনের চেয়ারম্যান মোস্তফা সেলিম উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
উন্নয়ন, সেবা এবং চেতনা বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন।
১. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা। ২. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ ও লালন। ৩. মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। ৪. মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অথনৈতিক পীড়ন থেকে উদ্ধারের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ। ৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শাণিত করার জন্য সভা, সেমিনার, গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠামূলক কর্মসূচি গ্রহণ। ৬. মুক্তিযুদ্ধের ওপর বুকলেট, পোস্টার ও গ্রন্থ প্রকাশনা।
Please get in touch with Dr Noor Foundation to discover more about our work and how to engage and contribute to making a difference. We thank you for your support.
Kindness is the language which the deaf can hear and the blind can see. — Mark Twain